• blogger
  • facebook
  • linkedin
  • twitter
  • youtube

জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচার ১

[জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – কোর্স পরিচিতি]

[জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচার ২]

১) ‘জিআইএস’ কি?

সবার প্রথমেই আমাদেরকে জানতে হবে ‘জিআইএস’ এর সংজ্ঞা। ‘GIS’ হল তিনটি অক্ষরের সমন্বয়। ‘G’, ‘I’ এবং ‘S’। আমরা পর্যায়ক্রমে এই তিনটি অক্ষরের অর্থ বুঝতে চেষ্টা করবঃ

১.১) ‘G’ কি?

আমাদের কোর্সের ‘G’ হল ‘Geographic’। এবার একটু ভেঙ্গে ভেঙ্গে বোঝার চেষ্টা করি। ‘Geo’ মানে ‘ভূ’। আর ‘Geographic’ মানে হল ‘ভৌগোলিক’।

একটা ব্যাপার আমরা প্রায়ই ভুল করি। আর তা হল, ‘Space’ এবং ‘Geo-Space’ এই দুইটা শব্দের মধ্যকার পার্থক্য।

আমি যদি ‘Space’ বলি এর মানে হল, মহাজাগতিক সকল বস্তুর আধার অথবা মহাশূন্য অথবা আকাশগঙ্গা (Milky Way)। ‘Space’ বললে এর পরিসর হয়ে যাবে এই মহাবিশ্বের সকল গ্রহ, নক্ষত্র, উপগ্রহ ইত্যাদি সকল কিছু।

আর আমরা যদি ‘Geo-Space’ বলি, তাহলে আমাদের পরিসর হয়ে যাবে শুধুমাত্র ‘পৃথিবী’।

‘Space’ বললে ‘পৃথিবী’ আসতে পারে আবার ‘মঙ্গল’ গ্রহও আসতে পারে। কিন্তু ‘Geo-Space’ বললে শুধুমাত্র ‘পৃথিবী’ বুঝায়।

সহজ কথায়, আমাদের কোর্সের Geographic’-এর আওতায় আসতে পারবে পৃথিবীর- স্থলভাগ, জলভাগ এবং বায়ুমণ্ডল। এর বাইরের আর কোন কিছুই আমাদের ধর্তব্যের বিষয় নয়। অর্থাৎ আমাদের পরিসর শুধুমাত্র পৃথিবীর মধ্যেই সীমাবধ্য হয়ে গেল। আমি তো মনে করি, লেকচারের শুরুতেই এইটা একটা ‘শুভ’ সংবাদ!

১.২) ‘I’ কী?

আমাদের কোর্সের ‘I’ হল ‘Information’; ‘Information’-এর বাংলা হল ‘তথ্য’।

কিন্তু আমি এইখানেই বলে শেষ করব না। কিছু বিষয় ব্যাখ্যা করা দরকার। যেমন আমাদেরকে বুঝতে হবে ‘Data’ এবং ‘Information’-এর মধ্যকার পার্থক্য।

‘Data’ মানে হল ‘উপাত্ত’। শুধুমাত্র ‘উপাত্ত’ (Data) নিজে থেকে কোনো অর্থ বহন করে না। উপাত্তকে কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি অর্থবহভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, তবেই তা তথ্যে পরিণত হয়।

যেমন, নিচের উদাহরণটা দেখি। এইখানে কোন দফতরের ৫ জন কর্মচারীদের লিঙ্গ এবং বয়স দেখানো হয়েছে। এই ধরণের তালিকাকে ‘উপাত্ত’ (Data) বলে।

ক্রমিক সংখ্যা

লিঙ্গ

বয়স (বছর)

মহিলা

২৬

পুরুষ

৩২

পুরুষ

৪৮

মহিলা

৫১

মহিলা

৩৭

এইবার আমরা উপরের তালিকা থেকে পরিসংখ্যান-সংক্রান্ত বিশ্লেষণ (Statistical Analysis) করে নিম্নলিখিতি ‘তথ্য’ (Information) বের করতে পারিঃ

মহিলা-পুরুষ অনুপাত = ৩:২

সকলের গড় বয়স = ৩৮.৮ বছর

সহজ কথায়, ‘উপাত্ত’ (Data) থেকে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘তথ্য’ (Information) আহরণ করা হয়ে থাকে। আমার মনে হয়, ‘তথ্য’ বা ‘Information’ অর্থাৎ কোর্সের ‘I’ নিয়ে আমাদের ধারণা এখন অনেকটাই পরিষ্কার।

১.৩) ‘S’ কী?

GIS-এর এই ‘S’ খুবই ঝামেলাদায়ক একটি ব্যাপার। বিভিন্ন গবেষক এবং প্রতিষ্ঠান এই ‘S’-কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। বর্তমানে ‘S’-এর চারটি অর্থ প্রচলিত আছে।

‘S’ হতে পারে Science/ System/ Service/ Studies। অর্থাৎ ‘GIS’ হতে পারেঃ

  • Geographic Information Service (GIService)

‘Service’ হল সেবা। আর ‘সেবা’ হল অন্যের জন্য সম্পাদিত কোন কর্ম বা দায়িত্ব। যেমনঃ চিকিৎসা সেবা বা সরকারি চাকরি। এইটা আবার বাণিজ্যিক সেবাও হতে পারে। যেমনঃ কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি বা ব্যবসা করা।

আজকাল অনেকেই বিভিন্ন সফটওয়্যার বা অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘GIS’ নিয়ে কর্মরত আছেন। আবার সাম্প্রতিক সময়ে নতুন এক ধারণার জন্ম হয়েছে, যাকে বলা হয়ে থাকে-‘Crowd-Sourcing’ বা ‘Volunteered Geographic Information (VGI)’। এইগুলো হল স্বেচ্ছাসেবামূলক ‘জিআইএস’। এর উদাহরণ হলঃ ‘Wikimapia’ বা ‘OpenStreetMap’।

এইধরণের নানাবিধ ‘GIS’ ভিত্তিক সেবা-সমূহকেই বিভিন্ন গবেষকেরা ‘GIService’ হিসাবে অভিহিত করে আসছেন।

  • Geographic Information Studies (GIStudies)

‘Study’ হল পাঠ বা অধ্যয়ন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘GIS’-কে ঘিরে অসংখ্য শিক্ষক, ছাত্র এবং গবেষকরা কর্মরত আছেন।

সচরাচর ‘GIStudies’ বলতে বোঝানো হয়ে থাকে, সমাজের ভৌগলিক তথ্যের নিয়মাবদ্ধ (Systematic) ব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়ঃ একটি এলাকার কোন কোন ভবনগুলো ভূমিকম্পে অরক্ষিত, তা নানাবিধ মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে বের করা।

এই ধরণের বাস্তবধর্মী গবেষণা বা কর্মকাণ্ডকে অনেকেই ‘GIStudies’ বলতে চাচ্ছেন।

  • Geographic Information Science (GIScience)

ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান (Science)।

সর্বোপরি, ‘জিআইএস’কে বর্তমান সময়কার গবেষকেরা ‘বিজ্ঞান’ বলে অভিহিত করছেন। ‘GIS’ আসলে ভূগোল, মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা (Cartography), Photogrammetry, Remote Sensing, ভূ-গনিত (Geodesy), জরিপ (Surveying), কম্পিউটার বিজ্ঞান, স্থান-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান (Spatial Statistics), উপাত্ত-ভাণ্ডার ব্যবস্থাপনা (Database Management) ইত্যাদি নানাবিধ জ্ঞানের শাখার বা পাঠ্য বিষয়ের (Discipline) সমন্বয়ে গঠিত প্রযুক্তি।

সহজ কথায়, ‘GIScience’ হল ভৌগোলিক তথ্য এবং প্রযুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ নিয়ে উদ্ভূত হওয়া অর্জিত জ্ঞান।

  • Geographic Information System (GISystem)

‘System’ হল ‘ব্যবস্থা’ বা ‘পদ্ধতি’। ‘GISystem’ হল হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, উপাত্ত, জনসাধারণ (People), সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সম্বলিত এমন একটি সুবিন্যস্ত-ব্যবস্থা যা পৃথিবীর এলাকা/অঞ্চল-সমূহের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং প্রচার করে থাকে।

‘GISystem’-এর চারটি উপাদান বা অংশ (Sub-System) রয়েছেঃ

  • সম্ভরণ (Input): উপাত্ত সংগ্রহ করা। যেমনঃ মানচিত্র, পরিক্রমিত মানচিত্র (Scanned Map), আকাশস্থ ছবি (Aerial Photos), উপগ্রহ চিত্র (Satellite Images), জরিপ (Survey) ইত্যাদি।
  • সংরক্ষণ (Storage):  উপাত্ত-ভাণ্ডারে (Database) উপাত্ত সংগ্রহ করে রাখে। দরকার হলে ইহা হালনাগাদ (Update), সম্পাদন (Edit), অনুসন্ধান (Query) এবং পুনরূদ্ধার (Retrieval) করা হয়।
  • বিশ্লেষণ (Analysis): বিভিন্ন ধরণের বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপাত্ত থেকে তথ্য বের করা। যেমনঃ রুপান্তর (Transformation), প্রতিমালেপ (Modelling), Spatial Statistics ইত্যাদি।
  • উৎপাদ (Output): বিশ্লেষণের মাধ্যমে অর্জিত ফলাফলকে মানচিত্র, সারণী, তালিকা, ছক, জ্যামিতিক চিত্র (Figure), রেখাচিত্র (Diagram), বিবরণী, প্রতিবেদন (Report) ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ করাই হল উৎপাদ (Output)। সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে অর্জিত ‘উৎপাদ’ বিভিন্ন ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে (Decision Making) সহায়তা করে।

যাইহোক, ‘GIS’-এর এই ‘S’ নিয়ে অনেক কথা হল। চাইলে আরও অনেক কিছু বলা যায়। আসল কথা হল, আমরা আমাদের বাকি লেকচারগুলোতে ‘GIS’ বলতে ‘Geographic Information System’ বুঝব। কেননা বর্তমানে ‘GISystem’ এই পরিভাষাটি (Terminology) সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এবং গ্রহণযোগ্য।

** একটা কথা জেনে রাখা ভাল। আর তা হল, ‘রজার টমলিনসন‘কে ‘Father of GISystem’ হিসাবে স্বীকার করা হয়। আর ‘Father of GIScience’ বলা হয়ে থাকে ‘মাইকেল ফ্র্যাঙ্ক গুডচাইল্ড’কে। ১৯৯২ সালে ‘মাইকেল ফ্র্যাঙ্ক গুডচাইল্ড’ সর্বপ্রথম ‘GIScience’ পরিভাষাটি উত্থাপন করেন।

__________________________________________________________________

আজকের মত ‘লেকচার-১’ এইখানেই শেষ করছি। আজকের দিন শেষে, আমরা মূলত ‘GIS’-এর ‘সংজ্ঞা’ শিখতে এবং বুঝতে চেষ্টা করলাম। আগামী লেকচারে আমি [‘GIS’-এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস], [‘GIS’-এর উপাদানসমূহ], [‘GIS’-এর উপকারিতা] এবং [বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘GIS’-এর বাস্তবিক প্রয়োগের উদাহরণসমূহ] – এই ৪ টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

আমার এই লেকচার বা এই ‘GIS’ কোর্সের পাঠ্যসূচী নিয়ে যদি আপনাদের কোন মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে দয়া করে নিচের মন্তব্য অংশে লিখবেন। আমি যতটুকু সম্ভব উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।

ধন্যবাদ! সবাই ভাল থাকবেন।

I hold the position of Associate Professor at the Department of Risk and Disaster Reduction (RDR) at University College London (UCL). My research experience spans across disaster risk reduction (DRR), conflict and migration, climate change adaptation, genocide diplomacy, community vulnerability assessment, climate mobility, and disaster displacement. I specialise in the intersection of conflict and disaster, with a vision to improve the quality of life of displaced persons and stateless populations. I am driven by a passion for collaborating with frontline communities, aiming to understand their challenges comprehensively and develop actionable policy recommendations to meet their specific needs. My academic journey led me to earn a PhD in Disaster Risk Reduction from UCL, a joint Master of Science degree in Geospatial Technologies from universities in Spain, Germany, and Portugal, and a Bachelor of Urban and Regional Planning degree from the Bangladesh University of Engineering and Technology (BUET).